পটচিত্র

পটে অঙ্কিত বিভিন্ন চিত্রকেই মূলত পটচিত্র বলা হয়ে থাকে। সংস্কৃত পট্ট শব্দ থেকে পট শব্দের উৎপত্তি যার অর্থ কাপড়। প্রাচীন বাংলায় যখন কোন দরবারি শিল্পের ধারা গড়ে ওঠেনি, তখন পটচিত্রই ছিল বাংলার গৌরবময় ঐতিহ্যের ধারক। যারা এই চিত্র অঙ্কন করেন তাঁদের বলা হয় পটুয়া।

পট প্রধানত দু প্রকার দীর্ঘ জড়ানো পট ও ক্ষুদ্রাকার চৌকা পট। জড়ানো পট ১৫-৩০ ফুট লম্বা ও ২-৩ ফুট চওড়া হয়। আর চৌকা পট হয় ছোট আকারের। সর্বপ্রথম কাপড়ের উপর কাদা, গোবর এবং আঠার প্রলেপ দিয়ে জমিন তৈরি করা হয়। তারপর সেই জমিনে পটুয়ারা তাঁদের তুলির আঁচরে ফুটিয়ে তোলেন বিভিন্ন চিত্র। পটে নানান ধরনের দেশজ রং ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ইটের গুঁড়া, কাজল, লাল সিঁদুর, সাদা খড়ি, আলতা, কাঠ-কয়লা ইত্যাদি ব্যবহার করা হয় রঙের কাজে। তুলি হিসেবে কঞ্চির ডগায় পশুর লোম বা পাখির পালক ব্যবহার করা হয়।

পট চিত্রকর একাধারে কবি, গায়ক ও চিত্রশিল্পী। পটুয়াগণ গান গেয়ে পটে আঁকা ছবির কাহিনি বর্ণনা করে থাকেন। এই সকল কাহিনির মূল বিষয়গুলো লৌকিক যেমন, গাজীকালু, মররম, কৃষ্ণলীলা, বেহুলা লক্ষীন্দর ইত্যাদি। জড়ানো পটে বিশটির ও বেশি ফ্রেম থাকে যেখানে পটুয়া ফুটিয়ে তোলেন নানান আখ্যানকাহিনী।শ্রোতাদের কাছে তাঁরা জড়ানো পটের ফ্রেমগুলো একের পর এক খুলে বর্ণনা করে যেতে থাকেন পটে আঁকা কাহিনীগুলো।

সময়ের পালাক্রমে পটশিল্প তার পুরনো জৌলুস হারালেও, এখনও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে একটি বিশেষ চিত্রকর সম্প্রদায় এক আখ্যানধর্মী লোকচিত্রকলার পেশায় নিয়োজিত।

Photo Credit: Tiger Art Gallery

0
    0
    Your Cart
    Your cart is emptyReturn to Shop