

নদীমাতৃক বাংলাদেশের মানুষের সাথে নৌকা বাইচ শব্দটি জড়িয়ে আছে অঙ্গাঙ্গিনভাবে। বাইচ শব্দটি ফারসি যার অর্থ বাজি বা খেলা। জাতীয় নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় দূরত্ব হয় ৬৫০ মিটার। প্রতিটি নৌকায় ৭,২৫,৫০ বা ১০০ জন মাঝি বা বৈঠাচালক থাকে।
বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতির উপর রয়েছে নদ-নদীর গভীর প্রভাব। বিভিন্ন অঞ্চলের নৌকার রয়েছে নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য। ঢাকা, গফরগাঁও, ময়মনসিংহ এলাকায় বাইচের জন্য ব্যবহার করা হয় কোশা ধরণের নৌকা যা ১৫০ ফুট থেকে ২০০ ফুট হয়ে থাকে। নৌকার সামনের ও পিছনের অংশ সোজা হয়ে থাকে। টাঙ্গাইল ও পাবনা জেলার নৌকা বাইচে তুলনামূলক সরু ও লম্বা দ্রুতগতিসম্পন্ন ছিপ জাতীয় ব্যবহার করা হয়। নৌকার পিছনের দিকটা নদীর পানি থেকে প্রায় ৫ ফুট উঁচু হয় এবং সামনের দিকটা পানির সাথে মিলানো থাকে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া, আজিমিরিগঞ্জ ও সিলেট অঞ্চলে বাইচের জন্য সারেঙ্গি নৌকা ব্যবহার করা হয়। এই ধরণের নৌকার প্রস্থ একটু বেশি হয়ে থাকে। নৌকার সামনের ও পিছনের দিকটা হাঁসের মুখের মতো চ্যাপ্টা হয়ে থাকে।
মুসলিম যুগের নবাব-বাদশাহগণ নৌকা বাইচের আয়োজন করতেন। অনেক নবাব বা বাদশাহদের জল বা নৌ বাহিনীর দ্বারা নৌকা বাইচ উৎসবের গোড়াপত্তন হয়। পূর্ববঙ্গের ভাটি অঞ্চলে প্রশাসনিক অন্যতম উপায় ছিল নৌশক্তি। বাংলার বারো ভুঁইয়ারা নৌবলে বলিয়ান হয়ে মুগলদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। মগ ও হার্মাদ জলদস্যুদের দমন করতেও নৌশক্তি ব্যবহূত হয়েছে। এদের রণবহরে দীর্ঘ আকৃতির ‘ছিপ’ নৌকা থাকত।
সময়ের পরিক্রমায় নৌকা বাইচের আয়োজন সংকুচিত হয়ে আসলেও, জাঁকজমকপূর্ণভাবে জাতীয় নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় । বাংলাদেশে নৌকা বাইচের সংগঠন ও উন্নয়নের জন্য ১৯৭৪ সালে গঠিত হয় বাংলাদেশ রোয়িং ফেডারেশন।
তথ্যসূত্রঃ বাংলাপিডিয়া
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.